ভারতে বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা: বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনা ও বাস্তবতা
আধুনিক বিশ্বে মানসম্মত শিক্ষার অন্বেষণে ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। বিশেষত, ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলো উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, সুশৃঙ্খল পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ প্রদানের কারণে অনেক বাংলাদেশী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই প্রবন্ধে ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলোতে লেখাপড়ার ধরণ, বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সেখানে পড়তে যাওয়ার কারণ এবং এর ব্যয় সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো।
শিক্ষার মান ও পরিবেশ
ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলোর শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানের সাথে তুলনীয়। এই স্কুলগুলো মূলত শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি তাদের মানসিক, শারীরিক এবং চারিত্রিক বিকাশের উপর সমান গুরুত্ব আরোপ করে। এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ:
- একাডেমিক উৎকর্ষতা: ভারতের প্রথম সারির বোর্ডিং স্কুলগুলো মূলত আইসিএসই (ICSE), সিবিএসই (CBSE), আইজিসিএসই (IGCSE) এবং আইবি (IB) কারিকুলাম অনুসরণ করে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। অভিজ্ঞ এবং উচ্চ প্রশিক্ষিত শিক্ষক দ্বারা এখানে পাঠদান করা হয়। শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজেক্ট, গবেষণা এবং ব্যবহারিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে গভীর ও প্রায়োগিক করে তোলে।
- সহশিক্ষা কার্যক্রম: খেলাধুলা, সঙ্গীত, নাটক, বিতর্ক এবং বিভিন্ন ক্লাবের মতো সহশিক্ষা কার্যক্রম ভারতের বোর্ঙে স্কুলগুলোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই কার্যক্রমগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব, দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়। অনেক স্কুলে অশ্বারোহণ, গল্ফ, শুটিং-এর মতো আধুনিক খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে।
- সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশ: বোর্ডিং স্কুলগুলো একটি নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ প্রদান করে, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। ২৪/৭ তত্ত্বাবধান এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অভিভাবকদের সন্তানের সুরক্ষা নিয়ে নিশ্চিন্ত রাখে। এই পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভরশীল ও নিয়মানুবর্তী হতে শেখায়।
- সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য: ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এবং বিশ্বের নানা দেশের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। এই বৈচিত্র্যময় পরিবেশে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়, যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ায়।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা কেন ভারতের বোর্ডিং স্কুলে পড়তে যাবে?
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভারতের বোর্ডিং স্কুল বেছে নেওয়ার পেছনে একাধিক যৌক্তিক কারণ বিদ্যমান:
- ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য: ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় যাতায়াত সহজ এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। ഇരു രാജ്യങ്ങളുടെ സംസ്കാരം, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে, যা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
- উন্নত শিক্ষার সহজলভ্যতা: বাংলাদেশে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সীমিত এবং প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে, ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলো একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে। বিশেষত, যারা পশ্চিমা দেশগুলোতে সন্তানদের পাঠাতে চান, তাদের জন্য ভারত একটি সাশ্রয়ী অথচ প্রায় সমমানের বিকল্প প্রদান করে।
- ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি: ভারতের বেশিরভাগ বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি। ফলে, শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষায় কথা বলা, লেখা এবং পড়ার ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠে, যা উচ্চশিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
- সামগ্রিক বিকাশ: ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলো শুধুমাত্র একাডেমিক ফলাফলের উপর জোর না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের সার্বিক বিকাশে মনযোগী হয়। এখানকার নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী করে তোলে।
- কিছু সামাজিক বাস্তবতা: বাংলাদেশের কিছু উচ্চবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের, বিশেষ করে মেয়েদের, তুলনামূলকভাবে একটি উদার এবং আধুনিক পরিবেশে বড় করতে চান। তারা মনে করেন, ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলো তাদের সন্তানদেরকে গতানুগতিক সামাজিক বলয়ের বাইরে থেকে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ করে দেয়।
খরচ কেমন?
ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলোর খরচ মূলত স্কুলের খ্যাতি, অবস্থান, কারিকুলাম এবং প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধার উপর নির্ভর করে। এই স্কুলগুলোতে বার্ষিক খরচ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এর মধ্যে টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এই প্রধান খরচগুলো ছাড়াও ভর্তি ফি, নিরাপত্তা জামানত (ফেরতযোগ্য), ইউনিফর্ম, বইপত্র, পরীক্ষা ফি এবং ব্যক্তিগত খরচের মতো আরও কিছু আনুষঙ্গিক ব্যয় রয়েছে।
উপসংহার
সামগ্রিকভাবে, ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলো বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মানসম্মত ও সুশৃঙ্খল শিক্ষাজীবনের সুযোগ করে দেয়। যদিও এর ব্যয় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছুটা বেশি, কিন্তু সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং সার্বিক বিকাশের কথা চিন্তা করে অনেক অভিভাবকই এই বিনিয়োগকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন। উন্নত একাডেমিক পরিবেশ, নিয়মানুবর্তিতা, আত্মনির্ভরশীলতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে ভারতের বোর্ডিং স্কুলগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা একজন শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারে।
Indian Boarding School Admission process:
Educarebd support Bangladeshi students to get Admission in India boarding school science 2019. For admission in Indian School Please call: 01711436261 or 01711435744 visit our Office: Educarebd, Lift: 06, 147/H, Green Road, Panthapath Signal, Dhaka.








